বর্ষার মৌসুমে লালপুর উপজেলা পরিষদের পাশে বনপাড়া ও লালপুরের সংযোগ সড়কের মাঝখানে একটি সেতু পুণঃ নির্মানের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী সহ অসংখ্য পথযাত্রীর দুর্ভোগ।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গোপালপুর রেলগেট থেকে উপজেলা পরিষদে যাওয়ার রাস্তার মাঝখানেই নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের বর্জ্য নির্গমনের জন্য ব্যবহৃত ক্যানেল উপর দিয়ে চলাচলের সুবিধার্থে একটা সাঁকো ছিল। সাঁকোটি লালপুর ও বনপাড়া অঞ্চলের দুইটি হাইওয়ের সংযোগ সড়কে অবস্থিত হওয়ায় দিন-রাত ২৪ ঘন্টায় সাঁকোর উপর দিয়ে বড় বড় বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, রিক্সা, ভ্যান সহ অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে।
দীর্ঘদিন আগে নির্মাণ করা এই সাঁকোটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সাংসদ জনাব শহিদুল ইসলাম বকুল এমপির জোর সুপারিশে তা আবার পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করলে সাঁকোটি যেহেতু পূর্বের স্থানেই নতুন করে নির্মাণ করা হবে,সেজন্য প্রাথমিক অবস্থায় চলাচলের জন্য পূর্বের পুরাতন সাঁকো ভেঙে পাশে একটি ‘পার্শ্বরাস্তা’ নির্মাণ করা হয়। আর ক্যানেলের মাঝখানে ভরাট দিয়ে পার্শ্বরাস্তা নির্মাণের ফলে শুরু থেকেই সেখানে একটার পর একটা সমস্যা লেগেই আছে। তাছাড়া এখন বর্ষার মৌসুম হওয়ার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই সেখানে জলাবদ্ধতা ও ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে ব্যাপক বৈরিতা তৈরি করলেও গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে বর্তমানে সেই পার্শ্বরাস্তাটিতে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রিপোর্ট করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দেখা যায় রাস্তার থেকেও প্রায় দের থেকে দুই ফুট উপর দিয়ে ক্যানেলের জল এপার-ওপার প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তা যথেষ্ট পরিমাণে উঁচু না করা এবং জল পারাপারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার উপর দিয়ে জল পারাপার হচ্ছে বলে জানা যায়।
গোপালপুর লালপুর উপজেলার একটা পৌরসভা যেখানে সুগার মিলের মত একটা ভাড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠান, একটা রেল স্টেশন, একটা স্টেডিয়াম, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র, ভুমি অফিস ও লালপুর উপজেলা পরিষদ অবস্থানের কারণে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ ও যানবাহন এই রাস্তায় চলাচল করে থাকে। একটা উপজেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কের এমন বেহাল দশায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। বিকল্প আর কোন ব্যবস্থা না থাকায় এখনো এই পার্শ্বরাস্তা দিয়ে ছোট বড় মিলিয়ে প্রচুর যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় বেশ কিছু গাড়ি অনেকটা পথ ঘুরে বিকল্প যে রাস্তা ব্যবহার করছে, সেই রাস্তা গুলোতেও তৈরি হচ্ছে বিঘ্নতা। এর আগেও পুরাতন সাঁকো ভাঙার সময় একটা বৈদ্যুতিক খুঁটি ধসে যাওয়ায় এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরাতন সাঁকো ভাঙার পর দীর্ঘদিন ধরে নতুন সাঁকো নির্মাণের কোন অগ্রগতি নাই। যার ফলে জন দুর্ভোগের পাশাপাশি পার্শরাস্তা দিয়ে যান চলাচলের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই এলাকাবাসী নির্মাণাধীন সাঁকোর ঠিকাদারের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি তারা নাটোরের একসেন অফিসে জানালেও কোন সুরাহা পাননি বলে জানা যায়।
নাটোরের একসেন নাওয়াজিস রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে, তিনি জানান- “প্রাকৃতিক দূর্যোগ তো চাইলেও মোকাবিলা করা যায় না। বৃষ্টি থামার আগে কোন রকম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না। আর করোনার কারণে আমদানি বন্ধ থাকায় সাঁকো তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে। আপাতত তাদের বিকল্প কোন রকম চিন্তাভাবনা নাই।”
উল্লেখ্য, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সাঁকো নির্মাণের কাজটি নাটোরের হাবিবুল আলম নামের এক ঠিকাদার কে দেওয়া হয়। জানুয়ারি মাসে কাজটির অনুমতি পত্র তাকে দেওয়া হলেও তিনি গত জুন মাসে কাজ শুরু করেন এবং বৃষ্টি ও করোনার কারণ দেখিয়ে বর্তমানে কাজটি বন্ধ আছে। জানা গিয়েছে, ঠিকাদার হাবিবুল আলম নাটোর সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির আস্থাভাজন।
নতুন সাঁকো নির্মাণের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে চলাচলের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে যেকোন সময় বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, এমনটাই এলাকাবাসীর দাবী।